
প্লাবন শুভ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় কোনো দর্শনীয় স্থান কিংবা বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় এ উপজেলার মানুষ ছুটি পেলেই ছুটেন পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি হ্রদে। সেটিই নিকটস্থ হওয়ায় পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের সাথে আনন্দ ভোগ করতে ছুটে আসেন এখানে।.
.
এটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট কোনো হ্রদ নয়, এটি কয়লাখনিতে ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের ফলে মাটি দেবে যাওয়ায় খনি এলাকায় সৃষ্টি হওয়া হ্রদ। ৪০০ একর এলাকাজুড়ে এ হ্রদের বিচরণ। ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসবের ছুটিতে বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে খনির এই হ্রদটি।.
.
ঈদের ছুটি শেষ হলেও বিশালাকৃতির হ্রদে এখনো ছুটছেন শত শত নানা বয়সী নারী পুরুষ। সবুজ পাড়ে নাগরদোলা এবং পানিতে নৌকা আর স্পিটবোর্ডে ঘুরছেন অনেকে। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ ট্রলার কেউ বা নৌকায় ঘুরছেন। অনেকে পানিতে তলিয়া যাওয়া রাস্তায় ছবি তোলায় উচ্ছ্বাস করছেন।.
.
রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে লেকে বেড়াতে আসা ইমরান হোসেন, নবাবগঞ্জের ঠসার মোড় থেকে আসা তোফায়েল ইসলাম বলেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্ধুদের সাথে নিয়ে এখানে বেড়াতেছেন এই হৃদে। লেকের কথা বিভিন্ন জনের মুখে শুনলেও বাস্তবে এসে খুব ভালো লেগেছে তাদের। কারণ এত বড় জলাশয় এই এলাকায় আর কোথাও নেই। নদীতে পানি না থাকায় নৌকায় ওঠার সুযোগ না থাকায় এখানে সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন’নি তারা। এজন্য নৌকায় ঘুরেছেন পু্রো হৃদে।.
.
ফুলবাড়ীর বাসিন্দা সুমাইয়া আক্তার, আরফিন ইসলাম বলেন, কাজকর্ম নিয়ে দিন কাটে। ফুলবাড়ীতে কোনো বিনোদন কেন্দ্র নাই। তাই এবার ঈদের বেশ লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটাতে ছুটে এসেছেন এই হৃদে।.
.
তারই মতো রাকিব হাসান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ফুলবাড়ী এতো গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়া সত্ত্বেও ফুলবাড়ীতে পরিবার নিয়ে আনন্দ করার মতো কোনো স্পট নাই। সবে মাত্র শিবনগর ইউনিয়নে একটি বিনোদন কেন্দ্র ছোট আকারে গড়ে উঠছে কিন্তু তা খুবই গ্রামাঞ্চলে। তাই সেদিকে না গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় নিয়ে এই হৃদে আসা।.
লেকটি সৃষ্টির পর থেকেই স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে বিনোদন পিপাসু মানুষ তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবে এখানে এসে সময় উপভোগ করেন। দর্শনার্থীদের জন্য ইতোমধ্যেই ব্যক্তি বিশেষের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে নৌকা, স্পিডবোট ও প্যাডেল বোট। এগুলো দিয়েই দর্শনার্থীদের লেক ঘোরানো হয়। .
দর্শনার্থীদের অনেকেই জানান, দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এই বড়পুকুরিয়া হৃদটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে এখান থেকে সরকারি বিপুল অংকের রাজস্ব আয় করতে পারবে, তেমনি এলাকার মানুষ বিনোদনের স্থান খুঁজে পাবেন। একই সঙ্গে লেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ, মাছ সংরক্ষণ, মাছের নিরাপদ প্রজননসহ বিলুপ্ত হওয়া মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। এই মৎস সম্পদ থেকেও সরকার রাজস্ব আয় করতে পারবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরগুলোকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।.
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ব্যস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মোহাম্মদ ছানাউল্লাহ জানান, বিগত সরকারের আমলে ওখানে একটি ভাসমান পাওয়ার প্লান্ট হওয়ার কথা ছিল। সরকার পরিবর্তনের পরে বতমানে বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। তবে হৃদসহ আশপাশের জায়গাগুলো কাজে লাগাতে পারলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব আয় করতে পারবে।. .
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: